নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ৩১ জুলাই খুন হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান। টেকনাফ থানার আওতাধীন বাহারছরা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সামনের চেকপোস্টে। খুনের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর অনেক কিছু ঘটে গেছে এবং এখনো ঘটছে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ৩১ জুলাই ও তার পরবর্তী টেকনাফ মডেল থানার সিসিটিভি ফুটেজ মামলার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে মনে করেছিলেন। টেকনাফ মডেল থানার সিসিটিভি এই ফুটেজ পাওয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে আদালতে তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদনও করেছিলেন। সংশ্লিষ্ট আদালত আইও এর করা আবেদন শুনানি করে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের অনুমতিও দেন।
এরপর মামলার আইও র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম আদালতের অনুমতি নিয়ে টেকনাফ মডেল থানা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে যান গত ১৮ আগস্ট। কিন্তু আইও তাঁর তদন্ত কাজের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় মনে করা সেই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারেননি। টেকনাফ মডেল থানার বিদায়ী ওসি মোঃ আবুল ফয়সল আইও মোহাম্মদ খায়রুল ইসলামকে জানালেন-সিসিটিভি’র রেকডিং নষ্ট থাকায় সিসিটিভি’র ফুটেজ দেওয়া যাচ্ছেনা। ‘সিসিটিভি’র রেকডিং নষ্ট থাকায় সিসিটিভি’র ফুটেজ দেওয়া সম্ভব হয়নি’ মর্মে লিখিত নিয়ে মামলার আইও র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম টেকনাফ মডেল থানা থেকে নিরাশ হয়ে ফেরত আসেন। সবাই অবাক হন, টেকনাফ থানা একটি মডেল থানা হওয়া সত্বেও কেন সিসিটিভি’র রেকডিং নষ্ট ছিলো! সবার ধারণা, সিসিটিভি ফুটেজে সিনহা হত্যা সংক্রান্ত স্পর্শকাতর বিষয় থাকায় তা মূলত সরিয়ে ফেলা হয়েছে। মামলার আইও সিসিটিভি’র ফুটেজ না পাওয়ার বিষয়টি তাঁর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও আদালতকে অবহিত করেন।
অপরদিকে, গত ৯ আগস্ট টেকনাফ মডেল থানার নতুন ওসি হিসাবে যোগদান করেন মোঃ আবুল ফয়সাল। গত ১১ আগস্ট মেজর (অবঃ) সিনহা হত্যা মামলায় টেকনাফের বাহারছরার মারিশবনিয়ার নুরুল আমিনকে সন্দেহজনক আসামি হিসাবে ধৃত করা হয়। পরে নুরুল আমিনের মাতা খালেদা বেগমকে পুলিশ জোর করে টেকনাফ মডেল থানায় এনে তার কাছ থেকে সাদা কাগজে দস্তখত নিয়ে সেখানে থানা কর্তৃপক্ষ তাদের ইচ্ছা মাফিক টাইপ করে খালেদা বেগমকে বাদী সাজিয়ে টেকনাফ মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা রুজু করে। যা খালেদা বেগম কিছুই জানেনা। এ মামলায় খালেদা বেগম ১০ আগস্ট দিবাগত রাতে অপরিচিত কিছু লোক তার পুত্র নুরুল আমিনকে তার বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় মর্মে অভিযোগ আনে। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর ১৯/২০২০ ইংরেজি। অথচ একইদিন ধৃত নুরুল আমিনকে সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি হিসাবে মামলার আইও আদালতে তাকে হাজির করেন। যা একটা প্রকাশ্য বিষয়।
নির্ভরযোগ্য সুত্র মতে, টেকনাফ মডেল থানার সিসিটিভির ফুটেজ সরিয়ে ফেলা এবং মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যার আসামি নুরুল আমিন এর মাকে বাদী সাজিয়ে ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে হিসাবে অহেতুক মামলা করার কারণে যোগদানের ১১ দিনের মধ্যে বদলি করা হয়েছে-টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ আবুল ফয়সল’কে। গত ২০ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে মোঃ আবুল ফয়সালের চাকুরী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান (APBn-এপিবিএন) এ সংযুক্ত করা হয়েছে।
একই সাথে টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) এবিএমএস দোহাকে নতুন ওসি নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ওসি’র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার বিদায়ী ওসি মোঃ আবুল ফয়সল টেকনাফ মডেল থানায় যোগদানের আগে কুমিল্লার চান্দিনা থানার ওসি ছিলেন।
গত ৩১ জুলাই মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোঃ রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হন। মেজর (অবঃ) সিনহা মোঃ রাশেদ হত্যায় তাঁর বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আদালত নম্বর-৩) টেকনাফের আদালতে গত ৫ আগস্ট এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানার নম্বর- ৯/২০২০ এবং জিআর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি।